প্রত্যয় ধর্ম ডেস্ক: আকিকা আরবি শব্দ। এর অর্থ কর্তন করা। নবজাতক ছেলে-মেয়ের জন্মের সপ্তম দিন পশুর যে রক্ত প্রবাহিত করা হয় তাকে আকিকা বলে। আকিকা একটি মুস্তাহাব আমল। নবজাতক সন্তানের পিতা বা অভিভাবকের পক্ষে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়পূর্বক কৃতজ্ঞতার নিদর্শনস্বরূপ আকিকা করা মুস্তাহাব।
রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে আকিকা প্রমাণিত। রাসুল (সা.) আপন নাতি হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর আকিকা করেছিলেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ছেলে-মেয়ের জন্য আকিকা। এদের পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত করাও এবং এর মাধ্যমে ময়লা (মাথার চুল) দূর কর।’ (বুখারি)
আকিকার পশু জবাইয়ের সময় : জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করা মুস্তাহাব। হজরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক শিশু তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধকস্বরূপ। কাজেই সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে জবাই করবে এবং তারা মাথা মুণ্ডন করে নাম রাখবে।’ (আবু দাউদ : ২/৩৯২)। সপ্তম দিনে না পারলে পরে যখনই করবে, সপ্তম দিনের হিসাবে করা উত্তম। অর্থাৎ সপ্তাহের যে বারে শিশু জন্মগ্রহণ করবে, তার আগের বারে আকিকা করবে। শুক্রবার দিন জন্মগ্রহণ করলে বৃহস্পতিবার আকিকা করবে। বৃহস্পতিবার জন্মগ্রহণ করলে বুধবার আকিকা করবে। এভাবে যখনই আকিকা করা হবে এই হিসাবে সপ্তম দিনে পড়বে। সন্তান বড় হয়ে গেলেও আকিকা করা যায়। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (সা.) নবুওয়াত পাওয়ার পর নিজের আকিকা নিজে করেছেন।’ (বায়হাকি)
আকিকার উপকারিতা : জীবনের প্রারম্ভে নবজাতকের নামে রক্ত প্রবাহিত করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। এটা ইসলামী ভ্যাকসিন। এর মাধ্যমে আল্লাহর হুকুমে অনেক পেরেশানি, বিপদ-মুসিবত ও অসুস্থতা থেকে মুক্তি মিলে। দুনিয়াবি ভ্যাকসিনের সঙ্গে আমাদের আখেরাতের ভ্যাকসিনের প্রতিও গুরুত্বারোপ করা উচিত। সন্তানের আকিকা করার মাধ্যমে কেয়ামতের দিন পিতা সন্তানের সুপারিশের উপযুক্ত হয়। এ ছাড়াও আকিকার মাধ্যমে দানশীলতার বিকাশ ঘটে। গরিব মিসকিন ও আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় হয়। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ে। পরস্পরে হৃদ্যতা ও আন্তরিকতাপূর্ণ ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।
আকিকার পশুর সংখ্যা : ছেলে সন্তানের জন্য দুটি ছাগল আকিকা করতে হয়। আর কন্যা সন্তানের জন্য একটি।
হজরত উম্মে কুরজ (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসুলকে (সা.) বলতে শুনেছি, ‘ছেলের জন্য এক ধরনের দুটি বকরি এবং মেয়ের জন্য একটি বকরি আকিকা করবে।’ (আবু দাউদ : ২৮৩৪)। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুল (সা.) তাদেরকে ছেলে সন্তানের জন্য দুটি সমবয়সি ছাগল আর মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আকিকা করার জন্য নির্দেশ করেছেন।’ (তিরমিজি : ১/১৮৩)
আকিকার জন্তুর ধরন : যে পশু দিয়ে কোরবানি করা বৈধ, সেই পশু দিয়ে আকিকা করাও বৈধ। যে পশু দিয়ে কোরবানি করা বৈধ নয়, সেই পশু দিয়ে আকিকা করাও বৈধ নয়। তাই আকিকার ক্ষেত্রে জন্তুর বয়স ও ধরনের দিক থেকে কোরবানির জন্তুর গুণ পাওয়া যায়, এমন জন্তুই নির্বাচন করতে হবে। (তিরমিজি : ৪/১০১)
কোরবানির জন্তুর সঙ্গে আকিকা করা : কোরবানির জন্তুর সঙ্গে আকিকা করা বৈধ। একটি পশুতে তিন শরিক কোরবানি হলে সেখানে আরও দুয়েক শরিক আকিকার জন্যও দেওয়া যেতে পারে। তদ্রুপ কোরবানির মতো একই পশুতে একাধিক ব্যক্তি শরিক হয়ে আকিকা আদায় করতে পারবে। (দুরারুল আহকাম : ১/২৬৬)। বড় পশু অর্থাৎ গরু, মহিষ, উট ইত্যাদিতে ছেলের জন্য এক শরিক আকিকা দিলেও তা আদায় হয়ে যাবে।
আকিকার গোশত : কোরবানির মতো আকিকার পশুর গোশতও তিন ভাগ করে এক-তৃতীয়াংশ নিজের জন্য, এক তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনদের জন্য সদকা করে দিয়ে বাকি এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া সুন্নত। অবশ্য পরিবারের সদস্য বেশি হলে ইচ্ছা করলে সব গোশতও নিজেদের জন্য রেখে দেওয়া যায়। আকিকার গোশত সচ্ছল আত্মীয়-স্বজনকেও দেওয়া যায়।
আকিকায় কুসংস্কার : অনেকেই মনে করে যে, আকিকার গোশত দাদা-দাদি ও নানা-নানি খেতে পারে না। এ ধারণা ভিত্তিহীন। সন্তানের মাথার চুল মুণ্ডানোর জন্য যখন মাথার উপরের ক্ষুর টানা হবে, ঠিক সেই মুহূর্তে আকিকার জন্তু জবাই করতে হবে, এটাও ভিত্তিহীন। মাথা মুণ্ডানোর আগে-পরে যেকোনো সময় আকিকার পশু জবাই করা যাবে। হজরত আতা (রহ.)-এর এক বর্ণনা মতে, আকিকার পশু জবাই করার আগে মাথা মুণ্ডিয়ে নেওয়া উত্তম। (আল মুকাদ্দামাতুল মুমাহহাদাত : ১/৪৪৯)